শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ অপরাহ্ন

নতুন কারিকুলামে দুর্বল হচ্ছে শিক্ষার ভিত

নতুন কারিকুলামে দুর্বল হচ্ছে শিক্ষার ভিত

  • শাহেদ মতিউর রহমান

– সংস্কারের দাবি অভিভাবকদের
-পরীক্ষা না থাকায় মেধা যাচাই বন্ধ

চলতি বছর থেকে শুরু হওয়া নতুন কারিকুলামে দুর্বল হচ্ছে শিক্ষার ভিত। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা। অপর দিকে অভিভাবকের অভিব্যক্তি হচ্ছে আগের মতো ক্লাসে পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের পথও বন্ধ। ফলে অনেক সুবিধা আর মেধা বিকাশের নানা পদ্ধতির কথা বলা হলেও বছর শেষে নতুন কারিকুলামের ফলাফল অশ্বডিম্ব বলেও মন্তব্য করেছেন অভিভাবকরা। তাই আগের মতো পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে এনে নতুন কারিকুলাম সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন তারা।

গত জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে মোট তিনটি শ্রেণীতে নতুন কারিকুলাম চালু হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীতে নতুন কারিকুলাম চালু হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে আরো তিন শ্রেণীতে চালু হচ্ছে নতুন এই কারিকুলাম। প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের অষ্টম এবং নবম শ্রেণীতেও চালু হচ্ছে নতুন কারিকুলাম। অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন গত এক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমাদের সন্তানরা আসলে কিছুই শিখতে পারছেন না। শ্রেণিকক্ষের পঠন ও শিখন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও নতুন কারিকুলামের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেন না।
অভিভাবকদের মতে আগের কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বাসায় এসে যেভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী থাকতো এখন তার ছিটেফোঁটাও আর নেই। বাসায় টেবিলেই বসতে চায় না শিক্ষার্থীরা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বাসায় এসে অলস সময় কাটায়। আর আগের মতো স্কুলে বা ক্লাসে পরীক্ষা না থাকায় মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।

গতকাল শনিবার কয়েকজন অভিভাবক নয়া দিগন্তকে জানান, নতুন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তথা নতুন কারিকুলাম আমাদের সন্তানদের শিক্ষার ভিত নষ্ট করে দিচ্ছে। যেখানে শিক্ষকরা নিজেরাই নতুন কারিকুলাম ভালো করে বুঝতে পারেন না, সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের কী পাঠদান করাবেন? তাদের মতে প্রথমে কাঠামো তৈরি করে তার পর এটা কয়েকটি বিষয়ের উপর চালু করা উচিত ছিল। পরীক্ষা পদ্ধতি ছাড়া মেধা মূল্যায়নের মতো বিষয়টি অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। যেখানে পরীক্ষার জন্য বই পড়তে চাইত না, সেখানে বাচ্চারা পরীক্ষাহীন লেখাপড়ায় বইয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখছে না। আমাদের সন্তানরা এখন মোবাইল, ট্যাব এগুলো নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। শিক্ষকরা ইন্টারনেট থেকে সব লিখে আনতে বলে। যেখানে সারা বিশ্ব ডিভাইস থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে আমরা উৎসাহিত করছি এগুলো ব্যবহার করার জন্য।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, বর্তমানে নতুন কারিকুলামে ব্যবহারিক নামক এক ধরনের যন্ত্রণা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি অভিভাবককে এতে জ্বলতে হচ্ছে। বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনে উপকরণ যেমন, গাছ লাগানো, টব বানানো, পুতুল বানানোসহ আরো অনেক কিছু করে আনতে হয় বাচ্চাদের। এগুলো মূলত বাচ্চাদের মায়েরা করে দেন। এই প্রকৃতির ব্যবহারিক কোনো উপকারে আসবে না। তাই সব ব্যবহারিক স্কুল থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

এ দিকে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কারসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরাম। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেছেন ফোরামের নেতারা। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অভিভাবকদের অনেকেই বলেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া আগের পরীক্ষা পদ্ধতিও ফিরিয়ে আনতে হবে। এতে মেধা যাচাই হবে নম্বরের ভিত্তিতে। আর সব ব্যবহারিক বিষয় স্কুল থেকে সম্পন্ন করতে হবে। নতুন কারিকুলাম পরিবর্তন করতে হবে এবং যে কোনো পরিবর্তন পরিমার্জন করতে হলে উক্ত কমিটিতে অভিভাবক প্রতিনিধি রাখতে হবে। এ ছাড়া অযৌক্তিকভাবে পরীক্ষা ফি ও বেতনও আর বাড়ানো যাবে না।

শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক তাহেরা আক্তার রূপা নয়া দিগন্তকে জানান, নতুন যে কারিকুলাম চালু করা হয়েছে তাতে আমাদের সন্তানদের শিক্ষার ভিত নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ছাড়া সদ্য প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কারের দাবিও জানান তিনি। শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, নতুন যে কারিকুলাম চালু করা হয়েছে, তাতে আমাদের সন্তানদের শিক্ষার ভিত নষ্ট করে দিচ্ছে। যেখানে শিক্ষকরা নিজেরা পাঠ্যক্রম ভালো করে বুঝতে পারেন না, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের কি পাঠদান করবেন তারা? অভিভাবকরা বলেন, নম্বরের ভিত্তিতে মেধা যাচাই করা আমাদের এই অঞ্চলের দেশগুলোর একটি অন্যতম বিষয়। সেখানে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত নিয়ে আমরা মেধা যাচাই করছি। পৃথিবীতে কোনো দেশের সুস্থ মানসিকতার কাউকে এই পদ্ধতি দিয়ে চিহ্নিত করা যায় না। এটা আমাদের বিকৃত শিক্ষাব্যবস্থা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877